নতুন আবিষ্কৃত Branchiostegus sanae মাছটি টাইলফিশের একটি প্রজাতি, যার নাম রাখা হয়েছে প্রিন্সেস মনোনোকের চরিত্র সান-এর নামে। অনেক অন্যান্য মাছের মতোই, B. sanae-কে বিজ্ঞানীরা প্রথম আবিষ্কার করেন একটি সি-ফুড মার্কেটে। এই মাছের বৈজ্ঞানিক নামের “sanae” অংশটি এসেছে এর মুখের উল্লম্ব লাল দাগের কারণে, যা মনোনোকেতে সানের ওয়ার পেইন্টের মতো।
Branchiostegidae পরিবারভুক্ত এই মাছের গণ বা জেনাস Branchiostegus, যা আটলান্টিক, ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরে পাওয়া যায়। টাইলফিশ সাধারণত সমুদ্রের নরম তলদেশে গর্ত খুঁড়ে বসবাস করে। এই জেনাসের মাছ তুলনামূলকভাবে অগভীর পানিতে বসবাস করলেও কেউ কেউ প্রায় ৬০০ মিটার গভীরেও বসবাস করে।

© Huang et al
একটি প্রজাতির “আবিষ্কার” আসলে একটু বিভ্রান্তিকর, কারণ B. sanae বহু আগে থেকেই মানুষের কাছে পরিচিত ছিল, কেবল বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণনা করা হয়নি। বাণিজ্যিকভাবে এ মাছ বহুদিন ধরে ধরা হয়ে আসছে, এমনকি এর একটি প্রচলিত নামও আছে – “鬼马头鱼” (ভূতুরে ঘোড়া-মাথা মাছ)। মজার বিষয় হলো, এই মাছের সাধারণ নামটিও অলৌকিক অর্থ বহন করে, যা এর নতুন বৈজ্ঞানিক নামের মতোই অতিপ্রাকৃততার ইঙ্গিত দেয়।
বর্তমানে, দক্ষিণ চীন সাগরের Xi’sha এবং Hainan দ্বীপপুঞ্জের কাছ থেকে সংগৃহীত মাত্র পাঁচটি নমুনা থেকে এই প্রজাতির বৈজ্ঞানিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই নতুন প্রজাতিটি চিহ্নিত করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে সাউথ চায়না সি ইনস্টিটিউট অফ ওশানোলজি, চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্স, ওশান ইউনিভার্সিটি অফ চায়না এবং ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।

© Huang et al

© Huang et al
গত ৩৪ বছরে মাত্র তিনটি নতুন Branchiostegus প্রজাতি বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণণা হয়েছে, তাই একটি নতুন প্রজাতির নাম একট্ অ্যানিমে চরিত্রের নামে রাখা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা।
তবে B. sanae একমাত্র প্রজাতি নয়, যার নাম অ্যানিমে চরিত্রের নামে রাখা হয়েছে। এর আগেও বহু প্রাণীর নামকরণ এমনভাবে হয়েছে, বিশেষত পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে।
উদাহরণস্বরূপ, Binburrum গণের তিনটি পোকা প্রজাতি (Binburrum articuno, Binburrum moltres এবং Binburrum zapdos)-র নাম রাখা হয়েছে পোকেমন ফ্র্যাঞ্চাইজির তিনটি লিজেন্ডারি পাখির নামে। এছাড়াও, Neon Genesis Evangelion অ্যানিমে সিরিজের নামে Lycocerus evangelium নামে এক ধরনের বিটলও রয়েছে। এমনকি, স্টুডিও জিবলির অন্য একটি চরিত্র টোটোরো-র নামেও একটি কীটের প্রজাতি রয়েছে যার নাম Eoperipatus totoro. প্রজাতিন নামকরণের বাইরে Asteroid in Love অ্যানিমের চরিত্র Ao Manaka-র নামেও একটি গ্রহাণুর নাম রাখা হয়েছে।
এই নামকরণের বিষয়ে গবেষক Haochen Huang বলেছেন: “প্রিন্সেস মনোনোকে মুভিতে, সান হলো এক তরুণী, যাকে ছোটবেলায় তার মানব বাবা-মা পরিত্যাগ করে। পরে নেকড়েরা তাকে লালন-পালন করে। সে নিজেকে বনের অংশ মনে করে এবং বন রক্ষার জন্য লড়াই করে। এই মুভিটি মানুষের সাথে প্রকৃতির জটিল সম্পর্ক নিয়ে তুলে ধরে এবং তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দেয়। আমরা এই নামের মাধ্যমে একই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।”
স্টুডিও জিবলির তৈরি প্রিন্সেস মনোনোক (Princess Mononoke) মুভিটি ১৯৯৭ সালে জাপানে মুক্তি পায়। মুভিটি পরিচালনা করেন অস্কার বিজয়ী পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি। মুক্তির পরেই পুরো জাপানে একটি আলোড়ন তৈরি করে ফেলে এবং ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে নেয় জাপানের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ থেকে।
অ্যানিমেটেড মুভির কাহিনিটি ঘুরে প্রিন্স আশিতাকা নামের এক তরুণের চারপাশে, যে একটি অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে মাইনিং টাউন এব১ ফরেস্ট স্পিরিটদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে সে সান-এর সাথে দেখা করে, যে নেকড়েদের দ্বারা লালিত এক তরুণী এবং বন রক্ষার জন্য লড়াই করে। এই গল্পে প্রিন্স আশিতাকা দুটি পক্ষের মধ্যে সমঝোতা আনার চেষ্টা করে, পাশাপাশি নিজের শরীরে থাকা অভিশাপের বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে যায়।
সুত্র: ZooKeys জার্নাল