অবশেষে সমাপ্ত হতে যাচ্ছে আরো একটি বছর। ২০২৩ এ ওটাকু বাংলা হাজির হয়েছিল সেবছরের সেরা অ্যানিমে সিরিজগুলোর তালিকা নিয়ে। গতবারের ধারাবাহিতায় এবারও বছরের সেরা অ্যানিমেগুলো নিয়ে আমরা হাজির! ২০২৪ অ্যানিমের জন্য অসাধারণ একটি বছর ছিলো। তবে ২০২৪ নিয়ে আমাদের আগ্রহ ও উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও বছরটি আমাদের জন্য ২০২৩ এর তুলনায় কিছুটা হতাশাজনকও বটে। ফ্রিরেন: বিয়ন্ড জার্নিস এন্ড, হেভেনলি ডিল্যুশন, প্লুটো-র মত অসাধারণ নতুন অ্যানিমের পাশাপাশি ভিনল্যান্ড সাগার দ্বিতীয় সিজনের মতো সিক্যুয়েল সিরিজগুলোও কন্টেন্ডার ছিলো গত বছরের সেরা অ্যানিমের মুকুটের। এবছর রিলিজ হওয়া বেশিরভাগ সিক্যুয়েল নতুন অ্যানিমেগুলোর সাথে সেভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনি। অর্থাৎ, সেরা অ্যানিমে সিলেকশন প্রসেস বেশ জটিলই ছিলো বলা চলে।
যাইহোক, আমরা অবশেষে বাছাই করেছি আমাদের মতে ২০২৪ এর সেরা সিরিজগুলোকে। সেরা অ্যানিমে সিলেকশনের ক্ষেত্রে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি ওভারল স্টোরিটেলিং, ন্যারেটিভ এবং ইমোশনাল ইমপ্যাক্ট, পাশাপাশি কালচারাল ইম্প্যাক্ট এবং অ্যানিমেশন। আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেয়া যাক ওটাকু বাংলার ২০২৪ এর টপ অ্যানিমে রেকমেন্ডেশন।
১০. জেলিফিশ ক্যান’ট সুইম ইন দ্য নাইট
“জেলিফিশ ক্যান’ট সুইম ইন দ্য নাইট (Jellyfish Can’t Swim in the Night)” ২০২৪ এর আন্ডাররেটেড সিরিজগুলোর একটি। স্প্রিং ২০২৪ সিজনে রিলিজ হওয়া অরিজিনাল সিরিজটির প্রোডাকশন স্টুডিও হচ্ছে “ওশি নো কো” এর স্টুডিও দোগা কোবো। এবছর রিলিজ হওয়া অনেক মিউজিক অ্যানিমের মাঝে একপ্রকার হারিয়ে যায় সিরিজটি।
কাহিনীর শুরু আলো টোকিওর ঝলমল শিবুইয়া সিটির এক রাতে। বহুবছর আগে শিবুইয়ার আঁকা জেলিফিশের মুরাল এক করে দেয় হাইস্কুল স্টুডেন্ট মাহিরু এবং ফর্মার আইডল কানোর পথ। মাহিরু সেই পেইন্টিং-এর আর্টিস্ট, অন্যদিকে কানোর কাছে এটি একরকম ইন্সপায়ারেশনাল। ঘটনাক্রমে মাহিরু এই দেয়ালচিত্রের আর্টিস্ট জানতে পারার পর মাহিরুকে নিজের সাথে কোলাব করার প্রস্তাব দেয় কানো। শুরু হয় মিউজিক্যাল গ্রুপ JELEE , গ্রুপের মেইন পারফর্মার এক্স-আইডল কানো, অন্যদিকে ইয়োরু (Yoru) নামে আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেয় মাহিরু। গ্রুপের নতুন মেম্বার হিসেবে যুক্ত হয় মাহিরুর ছোটবেলার এক বন্ধু এবং কানোর আইডল থাকাকালীন এক ফ্যান।
সিরিজটির প্রেমিস গতানুগতিক মিউজিক অ্যানিমের মতো হলেও এটি মূলত একটি কামিং অফ এইজ স্টোরি। গ্রুপের প্রত্যেক মেম্বার তাদের অতীতের কাছে বন্দী। সিরিজটি তাদের মিউজিকাল প্রজেক্টের পাশাপাশি তাদের রিগ্রেট, প্যাশন এবং হতাশাকে ওভারকাম করার জার্নিও। ২০২৪ এ আমাদের আধুনিক সভ্যতার উন্নতির পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে হতাশা এবং আত্মহত্যা। মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগীদের অনেকেই বয়সে ইয়াং এবং হতাশার একটি বড় কারণ এক্সট্রিম কম্পিটিশন, সোসাইটাল অ্যান্ড পিয়ার প্রেশার এবং আনফরগিভিং রিয়াল লাইফ সিনারিও যেখানে মানুষের প্যাশন, ইমোশনের তুলনায় তার প্রোডাক্টিভ ভ্যালুই বড়। এমন হতাশাময় যুগে সিরিজটি খুবই রিলেটেবল হতে পারে অনেকের জন্য। সিরিজটির সেন্ট্রাল ক্যারেক্টারগুলো আমাদের অনেকের সিচুয়েশনকে রিপ্রেজেন্ট করে যারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত রিয়ালিস্টিক লাইফ ইস্যুর সাথে ডিল করছে। কাহিনীর সবচেয়ে বড় লেসন ছিলো হতাশাকে ওভারকাম করে নিজেদের ড্রিমকে এবং নিজেদের নতুন করে এক্সপ্লোর করার। একইসাথে স্ট্রং ফ্রেন্ডশিপও সিরিজটির থিম । সিরিজটির নামও বেশ ইন্টারেস্টিং। জেলিফিশের কিছু প্রজাতি নিজেদের কালার বদলাতে পারে। সিরিজটির নাম এবং আন্ডারলাইয়িং ন্যারেটিভের সাথে যা ম্যাচ করে।
সিরিজটির ভয়েস অ্যাক্টিং, অ্যানিমেশনও বেশ প্রশংসার মতো। মিউজিকাল থিমড অ্যানিমে, রিয়ালিস্টিক সেটআপ ও ন্যারেটিভের জন্য “জেলিফিশ ক্যান’স সুইম ইন দ্য নাইট” জায়গা করে নিয়েছে আমাদের টপ অ্যানিমের লিস্টে।
৯. ডান ডা ডান
ডান ডা ডান (Dan Da Dan) তাৎসু ইউকিনোবুর একই নামের পপুলার শোনেন মাঙ্গার অ্যাডাপ্টেশন যা শোনেন জননার সাথে নিয়ে এসেছে সুপারন্যাচারাল ও রোমান্স জনরার এলিমেন্ট। ফল ২০২৪ সিজনে রিলিজ হওয়া সিরিজটির অ্যানিমেটর স্টুডিও সায়েন্স সারু এবং রিলিজের পর দ্রুতই সিরিজটি ফ্যানদের নজরে আসে ইউনিক ও আনকনভেনশনাল অ্যানিমেশনের কারণে।
গল্পের সূচনা হয় পপুলার হাইস্কুল স্টুডেন্ট মোমো আয়াসের সাথে কেন তাকাকুরা নামের ইন্ট্রোভার্টেড অন্য আরেক স্টুডেন্টের সাথে। কেন তাকাকুরাকে বুলিং এর শিকার হতে দেখে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায় মোমো। কিন্তু ইন্ট্রোভার্টেড কেন কাইন্ডহার্টেড এই এনকাউন্টারের ভিন্ন অর্থ করে মোমোর সাথে এলিয়েন নিয়ে আলাপ শুরু করে। দ্রুতই গল্পের উইয়ার্ড দুই চরিত্রের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। উভয়ই মুখোমুখি হয় সুপারন্যাচারাল ফেনোমেনা এবং এক্সট্রাটেরেস্টিয়াল বিয়িং এর, যা মোড় ঘুরিয়ে দেয় তাদের জীবনের। শুরু হয় সুপারন্যাচারাল বিয়িং, আরবান লেজেন্ড ও এলিয়েনে ভরপুর ওয়ার্ল্ডে তাদের রোমাঞ্চকর জার্নির।
ব্যাটল শোনেন জনরার সাথে সুপারন্যাচারাল, সায়েন্স ফিকশন ছাড়াও ডান ডা ডান মিক্স করেছে রোমান্স এলিমেন্ট ও কমেডি। মোমো এবং ওকারুন উভয়ই অকওয়ার্ড, আর দশটা হাইস্কুল স্টুডেন্ট থেকে আলাদা। সিরিজটির ক্রিয়েটর তাৎসু ইউকিনোবুকে সিরিজটির রোমান্সের আইডিয়ার জন্য শতাধিক রোমান্স মাঙ্গা পড়তে হয়েছে। অকওয়ার্ড দুই টিনেজারের রোমান্সের ফলস্বরূপ তৈরি হচ্ছে অসংখ্য কমেডিক মোমেন্টেরও। কমেডিক অ্যাপ্রোচে ডান ডা ডান কনভেনশনাল শোনেন আর্কিটাইপের বাইরে, এমনকি এক্সপ্লিসিট টেরিটরিতে যেতেও পিছপা হয়নি। পাশাপাশি সিরিজটি সোসাইটির বিভিন্ন ডার্ক এলিমেন্ট, ক্রাইম ইত্যাদি এক্সপ্লোর করে ওকারুন ও মোমোর সুপারন্যাচারাল এবং এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল এন্টিটির সাথে এনকাউন্টারে, টার্বো গ্র্যানি, অ্যাক্রোবেটিক সিল্কির স্টোরি সোসাইটির ডার্ক সাইডগুলোর রিপ্রেজেন্টেশন। সিরিজটি এপিসোড ৭ IMDB তে এখন ৯.৭ রেটেড যা অ্যানিমের জন্য বড় একটা রেকর্ড।
ইউনিক অ্যানিমেশন, জনরা ব্লেন্ডিং এলিমেন্ট, ডার্ক থিম, হিউমার, এবং ওভারল কালচারাল ইম্প্যাক্টের বিবেচনায় ডান ডা ডান জায়গা করে নিয়েছে ২০২৪ এর ওটাকু বাংলার টপ অ্যানিমে লিস্টে।
8. টু মেনি লুজিং হিরোইনস!
প্রতি সিজনেই জেনেরিক এপিসোডিক রোমান্স অ্যানিমে রিলিজ হয় যা ইউজুয়াল এবং প্রেডিক্টেবল রোমান্স অ্যানিমে ট্রোপ ফলো করে প্রোগ্রেস করে। “টু মেনি লুজিং হিরোইনস! (Too Many Losing Heroines!)” গতানুগতিক রোমান্স অ্যানিমের আড়ালে ভিন্ন কিছু নিয়ে রিলিজ হয় এবছরের সামারে। লাভ ট্রায়াঙ্গল অ্যানিমের একটি কমন ট্রোপ এবং রোমান্স আর্কিটাইপে অ্যানিমের রিজেক্টেড হিরোইনদের ট্রোপও বেশ পুরনো। কিন্তু অন্যান্য অ্যানিমে যেখানে ফোকাস করে মেইন কাপলদের দিকে, সেখানে “টু মেনি লুজিং হিরোইনস”এর হিরোইন হচ্ছে রিজেক্টেড গার্লস।
স্টোরির সূচনা এক ফ্যামিলি রেস্টুরেন্টে, অ্যান্টাই-সোশ্যাল হাইস্কুল স্কুডেন্ট কাজুহুকো নুকুমিজু অ্যাকসিডেন্টালি সাক্ষী হয় তারই ক্লাসের পপুলার ক্লাসমেট আন্না ইয়ামাদার রিজেকশনের। সেল্ফ-প্রোক্লেইমড “ব্যাকগ্রাউন্ড ক্যারেক্টার” নুকুমিজু ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আন্না হাজির হয় তার সাথে এবং বিলাপ করা শুরু করে কিভাবে তার চাইল্ডহুড ক্রাশকে ছিনিয়ে নিয়েছে আরেক ট্রান্সফার স্টুডেন্ট। ইয়ামাদার সাথে নুকুমিজুর মধ্যে আনলাইকলি একটা বন্ডিং তৈরি হয়। ঘটনাচক্রে নুকুমিজুর পরিচয় হয় আরো এমন রিজেক্টেড হিরোইনদের সাথে, পাশাপাশি সে যোগ দেয় লিটারেচার ক্লাবেও। সিরিজটি রোমান্স জনরার হলেও এটি এক্সপ্লোর করে টিনেজ রিলেশনশিপ ড্রামা, আমাদের সেল্ফ-প্রোক্লেইমড “ব্যাকগ্রাউন্ড ক্যারেক্টার” নুকুমিজুর দৃষ্টিকোণ থেকে। লাইট নভেল ও হাইস্কুলের ট্যাপওয়াটার নিয়ে এন্থুজিয়াস্টিক নুকুমিজু তারই আশেপাশের মানুষদের ড্রামায় জড়িয়ে পড়ে নতুনভাবে আবিষ্কার করে তাদেরকে এবং নিজেকে । অন্যদের লাইফের কমপ্লেক্সিটির সাথে ডিল করতে গিয়ে একইসাথে আবিষ্কার করে তার ভেতরে থাকা এম্প্যাথিক সাইড। ক্যারেক্টারে ডায়নামিক তাই অন্যান্য ক্লিশে সিরিজের চেয়ে অনেক বেশই রিয়ালিস্টিক মনে হয়েছে এখানে। রিলেশনশিপের উইনারদের বদলে লুজারদের পেইন এবং তা কাটিয়ে ওঠার দিকে ফোকাস করে সিরিজটি গতানুগতিক রোমান্স অ্যানিমে থেকে নিজেকে আলাদা করেছে।
সিরিজটিতে কমেডিক মোমেন্টেরও কমতি নেই। কমেডির মেইন এলিমেন্ট মূলত সিরিজটির প্রথম লুজিং হিরোইন আন্না ইয়ামাদা এবং “ব্যাকগ্রাউন্ড ক্যারেক্টার” কাজুহিকো নুকুমিজু। নুকুমিজু লাইট নভেল ফ্যান এবং রোমান্স জনরার সবরকম ট্রোপ এবং ক্লিশের ব্যাপারে অবগত। তার চারপাশে ঘটতে থাকা রিলেশনশিপ ড্রামার ব্যাপারে তার কমেন্টারি মূলত অ্যানেমেটির অ্যাটেম্পট রোমান্স জনরার কমন ট্রোপগুলোকে বেন্ড করার। একইসাথে সিরিজটি লিটারেচারের দিকেও সামান্য স্পটলাইট দেয়। পার্টিকুলারলি, নুকুমিজু এবং আরেক হিরোইন কোমারি আগে থেকেই বইপোকা, তাদের দেখে ইন্সপায়ারড হয় এমনকি আন্নাও। বাকী হিরোইন এমনকি বেশকয়েকজন সাইড ক্যারেক্টারও একরকম নার্ড। সিরিজটির এই অ্যাসপেক্ট অনেকটা হিইয়োকার (Hyouka) কথা মনে করিয়ে দেয় যেখানে মেইন কাস্টের সবাই ক্লাসিক লিটারেচার ক্লাবের সদস্য হয়, তবে দুটো সিরিজ সিমিলার না।
সিরিজটির অন্যতম স্ট্যান্ডআউট অ্যাসপেক্ট এর অ্যানিমেশন এবং ভয়েস অ্যাক্টিং। অ্যানিমেশন ছিলো বেশ প্রাণবন্ত, এবং ভিভিড। আর ভয়েস অ্যাক্টিং এইবছরের সেরা পারফরমেন্সগুলোর একটি। স্পেশালি আন্না ইয়ামাদা’র ভয়েস অ্যাক্ট্রেস তোনো হিকারুর পারফর্মেন্স ছিলো আউটস্ট্যান্ডিং। “টু মেনি লুজিং হিরোইনস!” রোমান্স স্লাইস অফ লাইফ জনরার রিমার্কেবল একটি টাইটেল হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে আমাদের টপ অ্যানিমে লিস্টে।
৭. ড্রাগন বল দাইমা
ড্রাগন বল দাইমা (Dragon Ball Daima) আকিরা টোরিয়ামার আইকনিক সিরিজ ড্রাগন বলের নতুন ইন্সটলমেন্ট এবং আকিরা টোরিয়ামার সর্বশেষ প্রজেক্ট। ২০১৮ তে ড্রাগন বল সুপারের সমাপ্তির পর টিভি অ্যানিমে হিসেবে দাইমা ড্রাগন বল সিরিজের প্রথম সংযোজন।
ড্রাগন বল দাইমার স্টোরিলাইন ড্রাগন বল জি সিরিজের মাজিন বু সাগা এবং ড্রাগন বল সুপারের ওপেনিং আর্কের মাঝামাঝি সময়ে। এর স্টোরি এক্সপ্লোর করছে মূলত ড্রাগন বল সিরিজের অল্টারনেট রিয়ালিটি বা ডেমন ওয়ার্ল্ড, দাইমাকাই হিসেবে যা পরিচিত। সিরিজটিতে এপর্যন্ত ডেমন ওয়ার্ল্ডের ব্যাপারে নানা তথ্য দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন গেমেও স্টোরিলাইন বিস্তৃত করলেও অ্যানিমেতে এটাই প্রথম।
দাইমার স্টোরি গতানুগতিক অ্যাকশন-প্যাকড ড্রাগন বলের পাশাপাশি কিছুটা স্লাইস অফ লাইফ ফিল দেয়। নতুন স্টোরিতে ডেমন ওয়ার্ল্ডের অজানা সব গল্প পুরনো ড্রাগন বলের কথা মনে করিয়ে দেয় যা ছোট্ট গোকুর জার্নির মাধ্যমে ড্রাগন বলের বিচিত্র ওয়ার্ল্ডের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় করায়। ড্রাগন বল দাইমার ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এর স্টোরির সবচেয়ে বড় স্ট্রং পয়েন্ট। সিরিজটি ডেমন ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি, সুপ্রিম কাই এবং নেমেকিয়ান রেস থেকে শুরু করে ইউনিভার্স নিয়েও ইন্টারেস্টিং অনেক সাইড এক্সপ্লোর করেছে ইতিমধ্যেই। একইসাথে গোকু বনাম তামাগামি নাম্বার থ্রির ফাইট অ্যানিমেশন ও অ্যাকশন জন্য বেশ প্রশংসাও পেয়েছে। ওভারল সিরিজটির অ্যানিমেশন বেশ দারুণ। অ্যাকশন অ্যাডভেঞ্চারের পাশাপাশি বেশকিছু কমেডিক মোমেন্টও অফার করছে সিরিজটি।
ড্রাগন বল দাইমা অসাধারণ ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, নস্টালজিয়া, ফ্লুইড অ্যানিমেশন এবং আইকনিক এক সিরিজ হিসেবে নিঃসন্দেহে বছরের অন্যতম সেরা অ্যানিমে এবং পাচ্ছে ওটাকু বাংলার টপ অ্যানিমে লিস্টে স্থান।
৬. মোনোগাতারি সিরিজ: অফ & মনস্টার সিজন
মোনোগাতারি সিরিজ বিখ্যাত এর ইউনিক ন্যারেটিভ স্টাইল, কম্পেলিং ডায়লগ, ক্যারেক্টার গ্রোথ এবং হিউম্যান ইমোশনকে ইউনিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক্সপ্লোর করার জন্য। সিরিজটির অরিজিনাল সোর্স ম্যাটেরিয়াল অর্থাৎ একই নামের লাইট নভেল সিরিজটিকে মর্ডান ক্লাসিক বলার মতো। মনোগাতারি সিরিজ: অফ অ্যান্ড মনস্টার সিজন (Monogatari Series: Off & Monster Season) সিরিজটির ন্যারেটিভকে কম্লিপমেন্ট করছে স্টুডিও শাফটের এক্সপেরিমেন্টাল, ক্রিয়েটিভ এবং ইউনিক অ্যানিমেশন স্টাইল, যার কৃতিত্ব স্পেশালি লীড ডিরেক্টর আকিয়ুকি শিমবু ও তার অ্যানিমেটর টিমের। ক্রিয়েটিভিটি এবং অ্যাস্থেটিক বিবেচনায় নিলে মোনোগাতারি সিরিজের লেটেস্ট ইন্সটলমেন্ট এবছরের সেরা অ্যানিমেগুলোর একটি।
লাইট নভেলের ফাইনাল সিজনের অ্যানিমে অ্যাডাপ্টেশনের প্রায় পাঁচ বছর পর রিলিজ হওয়া “অফ অ্যান্ড মনস্টার” সিজন মূলত ফোকাস করছে ওল্ড সিজনের সাইড ক্যারেক্টারদের লাইফের উপর, যা একইসাথে ফাইনাল সিজনের সিক্যুয়েল এবং স্টোরির ক্যারেক্টারদের অ্যাডাল্টহুডের সূচনাও। অনেকের কাছে সিরিজটি এক্সপ্লিসিটলি হারেম জনরার এবং পার্ভার্টেড মনে হতে পারে, কিন্তু সিরিজটি হিউম্যান ইমোশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং ফিলোসোফিকাল অ্যাসপেক্টে ভরপুর। মোনোগাতারি (物語) শব্দটির অর্থ “Story” বা “গল্প” যা মূলত সুপারন্যাচারাল ড্রামা ফোকাসড এবং ক্যারেক্টার ড্রিভেন। কাহিনীর চরিত্রগুলোর লাইফ এক্সপেরিয়েন্স, সুপারন্যাচারাল এনকাউন্টার, ট্রমা এবং ক্যারেক্টার প্রোগ্রেসন ইউনিক এবং ডায়লগ হ্যাভি ওয়েতে রিপ্রেজেন্ট করে সিরিজটি। সিরিজটির মেইন ক্যারেক্টার কোয়োমি আরারাগি হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ লাইফে পায় দিলেও সিরিজের এই ইন্সটলমেন্টের ফোকাস অন্য সাইড ক্যারেক্টারদের স্টোরি, রয়েছে একইসাথে গল্পের নানা সাইড স্টোরি।
সিরিজটির আগের ইন্সটলমেন্টগুলোর সাথে পরিচয় না থাকলে নতুন এই সিজন এবং কাহিনীর ইউনিক ন্যারেটিভ, স্টোরিটেলিং এবং অ্যাবস্ট্রাক্ট ফিলসোফিকাল এক্সপ্লোরেশন মাথার উপর দিয়ে যেতে পারে। অ্যানিমেশনের পাশাপাশি সিরিজটির ভয়েস অ্যাক্টিং পারফর্মেন্স ওয়ান অফ আ কাইন্ড। এবছরের সবচেয়ে ইউনিক এবং ক্যারেক্টার ড্রিভেন স্টোরি হিসেবে “মোনোগাতারি: অফ অ্যান্ড মনস্টার” ফিরিয়ে এনেছে আইকনিক সিরিজটিকে।
৫. ডেড ডেড ডেমনস ডেডেডেডে ডেস্ট্রাকশন
ইনিও আসানোর প্রথম অ্যানিমে অ্যাডাপ্টেশন “ডেড ডেড ডেমনস ডেডেডেডে ডেস্ট্রাকশন (Dead Dead Demon’s Dededede Destruction)” তার অন্যান্য গল্পগুলোর মতোই ডার্ক থিমড এবং রিয়ালিটি বেন্ডিং স্টোরিটেলিং যা পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপ্টিক এক ওয়ার্ল্ডে হিউম্যানিটি, পলিটিক্স, এবং হিউম্যান সোসাইটির এক্সপ্লোরেশন।
কাহিনীর প্লট ফিউচার টোকিও সিটির পটভূমিতে যা এলিয়েন ইনভেশনে আক্রান্ত। আকাশে ভাসমান এলিয়েন স্পেসশিপ এবং এলিয়েন আক্রমণের শঙ্কা মানুষের জীবন এবং দুনিয়াকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে। ইনিও আসানো এমন পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপ্টিক ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এর মাধ্যমে তৈরি করেছেন ইউনিক এক অ্যাটমসোস্ফিয়ার যেখানে মানুষের জীবন থেমে নেই, কিন্তু পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার দ্যোদুল্যমান আশঙ্কায় তাদের জীবনকে স্বাভাবিকও বলা সম্ভব নয়। এমন ইউনিক এক ওয়ার্ল্ড এক্সপ্লোর করা হয়েছে দুই হাইস্কুলার কাদোদে কোইয়ামা এবং ওউরান নাকাগাওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে যাদের ফ্রেন্ডশেপ গল্পের একটি সেন্ট্রাল থিম। তাদের চোখে হিউম্যান লাইফ এক্সপ্লোর করার পাশাপাশি কাহিনীতে সোসাইটি, মিডিয়া এবং পলিটিক্সের সমালোচনাও করা হয়েছে। একইসাথে সিরিজটি কোশ্চেন করে হিউম্যান লাইফের এক্সিস্টেন্স, এর মিনিং এবং পারপাস নিয়ে।
সিরিজটির রিচ ন্যারেটিভ, ফিলোসোফিকাল থিম, পলিটিকাল ও সোশ্যাল কমেন্টারির জন্য সিরিজটি অনেকের কাছে জটিল মনে হতে পারে। তবে ইউনিক স্টোরিটেলিং, অ্যাটমোস্ফিয়ার, এবং ন্যারেটিভ ডেপথের বিবেচনায় এটি বছরের ওয়ান অফ দ্য বেস্ট এবং আন্ডাররেটেড একটি অ্যানিমে। এন্টারটেইনমেন্টের পাশাপাশি থট প্রোভোকিং ইনসাইটে আগ্রহ থাকলে সিরিজটি অবশ্যই রেকমেন্ডেড।
৪. দ্য অ্যাপোথেক্যারি ডায়েরিস
দ্য অ্যাপোথেক্যারি ডায়েরিস (The Apothecary Diaries) মধ্যযুগের চাইনিজ এম্পায়ারের ইনার কোর্ট ড্রামার পটভূমির আড়ালে অসাধারণ হিস্টোরিকাল অ্যানিমে, একইসাথে রয়েছে রহস্য এবং তার সমাধানে হার্বোলোজিক অ্যাপ্রোচ। সিরিজটির সবচেয়ে বড় সেলিং পয়েন্ট এর ইনট্রিগিং মিস্ট্রি এবং এর ইন্টেলিজেন্ট, শার্প উইটেড প্রোটাগনিস্ট মাওমাও যার প্যাশন ঔষধিগাছ বা হার্ব কালেকশন।
মাওমাও বড় হয়েছে তার পালক পিতার সাথে, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক৷ স্বাভাবিকভাবেই মাওমাও তার অনুকরণে আগ্রহী হয়ে উঠে হার্বোলোজিতে। কিন্তু, হঠাৎ একদিন অপহরণের শিকার হয় মাওমাও। তার স্থান হয় রয়্যাল প্যালেসের ইনার কোর্টে সারভেন্ট হিসেবে। মাওমাও মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে বাকীদের সাথে। কিন্তু কৌতূহল এবং রহস্যের প্রতি আকর্ষণের কাছে হার মানে মাওমাও। মাওমাও নজরে আসে রয়্যাল প্যালেসের প্রভাবশালী ইউনাক জিনশির। জিনশির অনুরোধে মাওমাও সমাধান করা শুরু করে রয়্যাল কোর্ট এবং আশেপাশের অনেক রহস্য।
দ্য অ্যাপোথেক্যারি ডায়েরিস ভিভিড অ্যানিমেশন ও স্টোরিটেলিং এর মাধ্যমে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছে মধ্যযুগের চাইনিজ কিংডম এবং এর রয়্যাল কোর্ট, ভেতরের রাজনীতি। একইসাথে সিরিজটি এন্টারটেইনিং ছোটবড় রহস্য সমাধান, কমেডিক এবং ইমোশনাল মোমেন্টের জন্য। রহস্য সমাধান, ছোট প্লটপয়েন্টের পাশাপাশি প্যারারালি করা হয়েছে কাহিনীর মূল প্লটের এক্সপেনশন, মাওমাওর আসল পরিচয় এবং অতীত৷
রহস্য, স্লাইস অফ লাইফ এলিমেন্ট, ইনার কোর্ট পলিটিক্স, হিস্ট্রিকাল ড্রামার পাশাপাশি গল্পের প্রোটাগোনিস্টের হার্বোলোজির প্রতি প্যাশন, সবকিছু অসাধারণভাবে একই অ্যানিমেতে ফিউজ করতে সক্ষম হয়েছে ইন্ডাস্ট্রি ভেটেরান নোরিহিরো নাগানুমার ডিরেকশনে স্টুডিও ওএলএম এর এই অ্যাডাপ্টেশন। অ্যানিমেশন, স্টোরিটেলিং, লাইকেবল ক্যারেক্টরস, ইন্টারেস্টিং প্লট, আর্ট ডিরেকশন, সাউন্ডট্র্যাক সবকিছু বিবেচনায় সিরিজটি বছরের অন্যতম সেরা অ্যানিমে।
৩. সাউন্ড! ইউফোনিয়াম ৩
কিয়োটো অ্যানিমেশন বরাবরই অ্যানিমে ফ্যানদের উপহার দিয়েছে অসাধারণ সব স্লাইস অফ লাইফ সিরিজ যেখানে ইমোশন, আই ক্যাচি অ্যানিমেশন থেকে শুরু করে নস্টালজিয়া, কিছুরই কমতি নেই। কিয়োটোর গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ফলো করা তেমনই আরেক অ্যানিমে সাউন্ড ইউফোনিয়াম (Sound! Euphonium)। অ্যানিমেটির তৃতীয় সিজনের মাধ্যমে সমাপ্তি হলো মিউজিক্যাল থিমড এই স্টোরির।
সাউন্ড ইউফোনিয়ামের প্লটের কেন্দ্রে টিনেজ প্রোটাগনিস্ট কুমিকো ওউমায়ে। সিরিজের শুরুতে কুমিকো তার মিউজিক্যাল পাস্ট থেকে দূরে সরে আসতে চায় অতীতের ব্যর্থতা ভুলতে। কিন্তু ঘটনাচক্রে কুমিকো আবারো যোগ দেয় স্কুলের এনসেম্বল ব্যান্ডে। অ্যানিমেটির কাহিনী মূলত কামিং অফ এজ ড্রামা যেখানে কুমিকো মিউজিকের প্রতি তার ভালোবাসাকে রিডিস্কভার করে। একইসাথে সিরিজটির ফোকাস ফ্রেন্ডশিপ, মিচুয়াল রিলেশন এবং টিম ওয়ার্ক। গতবছর রিলিজ হওয়া প্রিকুয়েল মুভি এনসেম্বল কন্টেস্ট এর পরবর্তী প্লটলাইন ফলো করেছে সিজন ৩। কুমিকোর হাইস্কুলের লাস্ট ইয়ার অর্থাৎ অরিজিনাল নভেলের শেষ দুই পার্ট অ্যাডাপ্টেড হয়েছে এই সিজনে। কিতাউজি হাইস্কুল কনসার্ট ব্যান্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে লীড দিতে হয়েছে নতুন মেম্বারদের, নেভিগেট করতে হয়েছে হাইস্কুলের শেষবছর, এবং একইসাথে হতে হয়েছে বাস্তবতার মুখোমুখি। হাইস্কুলের পর মিউজিক্যাল ক্যারিয়ায়কে প্রাধান্য দেয়া নিয়ে দ্বিধায় কুমিকো। সিরিজটির ক্লাইমেক্স স্টোরির ওভারল ক্যারেক্টর গ্রোথ, ইমোশনাল ইম্প্যাক্ট, ড্রামা এবং সিরিজের মেইন প্রোটাগোনিস্টের জার্নিকে পারফেক্টলি ক্যারি করে। টিনেজ, কামিং অফ এজ ড্রামা জনরায় এটি বছরের সবচেয়ে ইম্প্যাক্টফুল অ্যানিমে।
মোনোগাতারি সিরিজের “অফ অ্যান্ড মনস্টার সিজন” বাদে এটিই আমাদের টপ লিস্টের একমাত্র সিক্যুয়েল অ্যানিমে। সারাবছর স্পটলাইটের বাইরে থাকলেও সাউন্ড ইউফোনিয়ামের শেষ সিজন ইমোশনাল ইম্প্যাক্ট, বিটারসুইট কনক্লুশন, এবং কিয়োটো অ্যানিমেশনের আর্টিস্টিক টাচের মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে এবছরের ওটাকু বাংলার টপ অ্যানিমের পাতায়।
৩. অর্ব: অন দ্য মুভমেন্ট অফ আর্থ
এবছরের সবচেয়ে ক্রিটিক্যালি অ্যাক্লেইমড সিরিজ হিসেবে “অর্ব: অন দ্য মুভমেন্ট অফ আর্থ (Orb: On the Movements of Earth)” আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে এমন এক সময়ে যখন বিশ্বাস করা হতো পৃথিবীর চারপাশে সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র, তারকারাজি আবর্তন করে। মানবসভ্যতার ইতিহাসের এমন এক সময় যখন সমগ্র ইউরোপময় চার্চের আধিপত্য। চার্চের ডক্ট্রিন অনুযায়ী আমাদের পৃথিবীই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু এবং অন্য যেকোনো বিশ্বাস ব্লাসফেমি এবং এতে বিশ্বাস করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। অর্ব আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় এমন কিছু চরিত্রের সাথে যারা চার্চের ডক্ট্রিনের ত্রুটি উপলব্ধি করতে পারে। একইসাথে চার্চের ডক্ট্রিনের বিরুদ্ধাচারণকারীদের বিরুদ্ধে চার্চের ইনকুইজিশনও সিরিজের মেজর থিম।
চার্চের জিওসেন্ট্রিক ডগমার বিরুদ্ধে বাস্তব ইতিহাসের বিভিন্ন বিজ্ঞানীর হেলিওসেন্ট্রিক ডগমা, চার্চের ক্র্যাকডাউন, এবং চার্চের ডক্ট্রিনের বিরুদ্ধে তাদের স্ট্রাগল বেশ সফলভাবে পোর্ট্রে করেছে অর্ব। সিরিজটিতে “সি” রিলিজিয়ন দ্বারা ক্যাথোলিসিজম এবং “কিংডম অফ পি” দ্বারা পোল্যান্ডকে রিপ্রেজেন্ট করে। চার্চের জিওসেন্ট্রিক ডগমার বিপরীতে প্রথমদিক হেলিওসেন্ট্রিক ডগমা প্রস্তাব করা বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপার্নিকাস পোল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চ ইউরোপের সায়েন্টিফিক রেভ্যুলেশনের চরম প্রতিপক্ষ ছিলো কয়েক শতাব্দী।
ফিকশন এবং ইন্টেলেকচুয়াল কনভার্সেশনের ফিউশন বেশ জটিল। তবে অসাধারণ কিছু স্টোরি ফিকশনের সাথে পারফেক্টলি রিয়ালিটিকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এমন একটি স্টোরি ছিলো ভিনল্যান্ড সাগা। অসাধারণ স্টোরিটেলিং তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলো ভাইকিং এজের পাশাপাশি স্টোরির প্যাসিফিস্ট এলিমেন্ট। অর্ব: অন দ্য মুভমেন্ট অফ আর্থ তেমনই রিয়ালিস্টিক এক্সপেরিয়েন্স ডেলিভার করতে সক্ষম হয়েছে। সিরিজের প্রতিটি মোমেন্ট এনজয়েবল, বাস্তব ইতিহাসের রিফ্লেকশন এবং ফিলোসোফিক্যালি রিচ। অর্বের স্টোরি পারফেক্টলি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে ইতিহাসের সেই সময়টাকে যখন সোসাইটির কনভেনশনাল নর্ম এবং এস্টাবলিশ বিলিফের বিরুদ্ধে চিন্তা করাও ছিলো মৃত্যু পারোয়ানার সামিল এবং মানবইতিহাসে অনেকেই সেটাকে অগ্রাহ্য করে খুঁজে বেড়িয়েছে মহাবিশ্ব এবং এর রহস্যকে।
অসাধারণ এই সিরিজটির অ্যানিমেশন স্টুডিও ম্যাডহাউজ যারা আগেও অনেক থট প্রোভোকিং অ্যানিমে অ্যাডাপ্টেশনের জন্য বিখ্যাত। সিরিজটির প্রথম অর্ধেক অলরেডি রিলিজ হয়েছে এবং বাকী এপসোডগুলো এয়ার হবে আগামী বছরের উইন্টার সিজনে।
১. ডেলিসিয়াস ইন ডানজন
ফ্যান্টাসি জনরার জন্য গতবারের মতো এবছরও ছিলো অসাধারণ। ফ্রিরেন: বিয়ন্ড দ্য জার্নিস এন্ড ফ্যান্টাসি জনরার জন্য নতুন এক গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড সেট করে গেছে। যদিও এবছর অ্যানিমেটির প্রথম সিজনের শেষদিকের এপিসোডগুলো এয়ার হয়, কিন্তু গতবছরের সেরার খেতাব পাওয়ায় সিরিজটিকে আমরা এবছর ইনক্লুড করিনি। এবছর মুশোকু টেনসেই, রি:জিরো, কোনোসুবার মতো জনপ্রিয় ইসেকাই-ফ্যান্টাসি অ্যানিমে রিলিজ হলেও সব প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়িয়ে কেবল বছরের সেরা ফ্যান্টাসি নয় বরং আমাদের তালিকায় সেরা অ্যানিমে হিসেবে নিজের নাম লিখিয়ে নিয়েছে “ডেলিসিয়াস ইন ডানজন (Delicious in Dungeon)“!
ডেলিশিয়াস ইন ডানজন বা ডানজন মেশির মেইন কাস্ট একটি অ্যাডভেঞ্চারিং পার্টি যারা ডানজন এক্সপ্লোর করার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে তাদের আরেক সঙ্গীকে বাঁচানোর জন্য। এমন বিপদজনক এবং অনিশ্চয়তারপূর্ণ জার্নিতে খরচ এবং সাপ্লাইয়ের ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য গ্রুপটি সিদ্ধান্ত নেয় ডানজনে এনকাউন্টার করা মনস্টারদের খাবার হিসেবে বেছে নেয়ার। খুবই উইয়ার্ড প্রেমিস এবং ফান অ্যাডভেঞ্চারের ফিল দেয়া সিরিজটি এবছরের সবচেয়ে রিল্যাক্সিং, থ্রিলিং, কমেডিক অ্যানিমে হিসেবে উঠে এসেছে টপে।
ফ্যান্টাসি, অ্যাডভেঞ্চার, অথবা ডানজনস অ্যান্ড ড্রাগনস ফ্যানরা সরাসরি নোটিস করলে অ্যানিমের ফান স্টোরির আপিল। যতোই আমাদের অ্যাডভেঞ্চারিং পার্টি ডানজনের গভীরে এক্সপ্লোর করতে থাকে, ততোই বিচিত্র মনস্টারের মুখোমুখি হয় স্কোয়াড। স্টুডিও ট্রিগারের অ্যানিমেশন এবং ডিরেক্টর ইয়োশিহিরো মিয়াজিমার অধীনে সিরিজটি যেমন একদিনে আর্টিস্টিকভাবে অসাধারণ তেমনকি অ্যাটমোস্ফিয়ার, সাউন্ডট্র্যাক, ভয়েস অ্যাক্টিং ছিলো অসাধারণ। আর মনস্টার এনকাউন্টারের পর সেগুলোকে রান্নার পর তৈরি হয় একের পর এক কমেডিক মোমেন্ট। স্টোরির সকল ক্যারেক্টার এক্সট্রিমলি লাইকেবল এবং ভয়েস পারফরম্যান্স এই উইয়ার্ড গ্রুপের কেমিস্ট্রিকে করেছে আরো ফান।
ফান এবং লাইটহার্টেড হলেও সিরিজটি একইসাথে অসাধারণ ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এবং মানুষ, এলফ, নৌম, ডোয়ার্ফ, অর্কের মতো বিভিন্ন রেসের সংমিশ্রণ যেকোনো টপ টিয়ার ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডের মতোই। বিভিন্ন রেসের মাঝে ডায়নামিক, পলিটিক্স, বিভিন্ন রেসের ইউনিক কালচারও স্টোরির ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংয়ে স্থান পেয়েছে। সিরিজের ম্যাজিক এবং পাওয়ার সিলিং বেশ ব্যালেন্সড।
তবে ফান অ্যাডভেঞ্চার, রিল্যাক্সিং অরা এবং গ্রেট ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংয়ের আড়ালে সিরিজটি শুরু থেকেই হাইড করে এর সিরিয়াস পার্ট৷ শুরু থেকেই পার্টি লীডার লাইয়োসের বোনকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে উইয়ার্ড এই পার্টি। কিন্তু সিরিজের মাঝপথে মোড় ঘুরতে থাকে স্টোরির। ডানজনের রহস্য যেখানে আনফোল্ড হওয়া শুরু করে। ডানজন মেশির অলরেডি সেকেন্ড অলরেডি ইন প্রোডাকশন, তাই আশা করা যায় ভবিষ্যতেও ফেইথফুল অ্যাডাপ্টেশনের মাধ্যমে সিরিজটির স্টোরিকে অ্যাডাপ্ট করা হবে।
সার্বিক বিবেচনায় ডেলিশিয়াস ইন ডানজন ওটাকু বাংলার এইবছরের টপ পিক। ফ্রেশ এবং ফান অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে থাকা ফ্যান্টাসি ফ্যানসহ প্রায় সবধরনের অডিয়েন্সকে আনফরগেটেবল এক জার্নির এক্সপেরিয়েন্স অফার করছে ২০২৪ এর সবচেয়ে লাইকেবল এবং রিল্যাক্সিং এই সিরিজ।
অনারেবল মেনশন:
- Nier: Automata Ver1.1a Part 2
- Sand Land: The Series
- Shoshimin: How to become Ordinary
- Spice and Wolf: Merchant Meets the Wise Wolf
- KonoSuba: God’s Blessing on this Wonderful World 3
- Re:Zero -Starting Life in Another World- Season 3
- Mushoku Tensei: Jobless Reincarnation Season 2 Part 2
- Girls Band Cry
- Ranma ½
- A Sign of Affection
- Bleach: Thousand-Year Blood War – The Conflict
- The Dangers in My Heart Season 2